জীবন্ত কিংবদন্তি। একজন জে কে রাওলিং। যিনি হ্যারি পটার নামের বিশ্ব বিখ্যাত সিরিজ বইয়ের লেখক।
পৃথিবীর একমাত্র লেখক যাঁর লেখা ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের বইগুলোর কপি সারা পৃথিবীতে বিক্রি হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন কপিরও বেশি এবং অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁর লেখা হ্যারি পটার সিরিজের ওপর তৈরি সিনেমা হয়েছে ব্লক ব্লাস্টার সিনেমা।
২০০৮ সালে তিনি হয়েছেন যুক্তরাজ্যের ১২তম শীর্ষ নারী ধনী। ২০১০ সালে ব্রিটেনের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী নারী হিসেবে নির্বাচিত হন। পুরো নাম জোয়ানি ক্যাথলিন রাওলিং। তিনি ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই। তিনি একাধারে লেখক, সিনেমা ও টিভির প্রযোজক।
চরম হতাশা, পারিবারিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও জয়ী হওয়া, এই লেখকের মতে সফলতার কারণগুলো হলো—
১. ধৈর্য হারাতে নেই
হ্যারি পটার প্রকাশ হওয়ার আগে মোট ১২ বার বাতিল হয়ে যায়। প্রকাশকেরা হ্যারি পটার–এর পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ধৈর্য হারাননি তিনি। ১২ বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি আশা ছাড়েননি। হ্যারি পটার ছাপা হওয়ার পর তা পৃথিবীর ৭০টা ভাষায় প্রকাশিত হয়।
জে কে রাওলিংয়ের হ্যারি পটার ও ডেথলি হ্যালোজ (Deathly Hallow) এক দিনে ১১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। অর্থাৎ ১ সেকেন্ডে বিক্রয় হয় ২০ কপি।
হ্যারি পটার সিরিজ লেখার সময়ে প্রথম স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁর চাকরি চলে যায়। থাকার জায়গা ছিল না। এই অবস্থান থেকে তিনি তাঁর লেখা চালিয়ে গেছেন। কখনোই ধৈর্য হারাননি।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বাধা–বিপত্তি যতোই আসুক ধৈর্য থাকতে হবে পাহাড়সম।
২. হতাশ হলে চলবে না
পারিবারিক দুঃখ–কষ্ট থাকবেই। চাকরি চলে যাওয়ার পর তাঁর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সীমাহীন বিপদে পড়েন। চরম মানসিক ও অর্থনৈতিক কষ্টে দিন পার করতে হয়। এ ধরনের পারিবারিক দুঃখ–কষ্টগুলোর মধ্যে থেকেও তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। কখনোই লেখা ছেড়ে দেননি।
৩. ব্যর্থতা জীবনের উন্নতির সোপান
জে কে রাওলিংয়ের মতে, ব্যর্থতা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অণুপ্রেরণা। নামীদামি প্রতিষ্ঠানগুলো তার বই ছাপতে চায়নি। ১৯৯৬ সালে তাঁর হ্যারি পটার বই প্রকাশ হয় ব্লুমস বারি ( blooms burry) প্রকাশনী থেকে। ছোট এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। তারপর হ্যারি পটার হয়ে ওঠে ইতিহাস।
৪. দৃঢ়তা একধরনের মেধা
জে কে রাওলিংয়ের মতে, দৃঢ়তা একধরনের মেধা। যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্নতা থাকতে হবে। তাঁর মতে, শুধু প্রখর মেধাশক্তি থাকলে চলবে না। জয়লাভের জন্য নিরবচ্ছিন্ন একাগ্রতা থাকা প্রয়োজন।
৫. নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে
নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস না থাকলে কোনো কাজই সম্ভব না। জেকে রাওলিংয়ের মতে, ‘আপনার মেধা সৃজনশীলতার প্রতি অটুট বিশ্বাস না থাকলে, আপনাকে অন্যরা বিশ্বাস করবে না। নিজের ওপর প্রবল আস্থা থাকতে হবে। আপনাকে নিজের ওপর প্রবল আস্থা রাখতে হবে যে, আপনি পারবেন।
৬. দূরদর্শী হতে হবে
হেঁয়ালিপনায় কাজ করলে চলবে না। আপনার ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম করার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে জয়ী হতে হবে। সফলতা মানুষের ভাগ্যে তখনই জুটবে, যখন আপনি অক্লান্ত পরিশ্রম করবেন। যেকোনো ধরনের মানসিক কষ্টকে তিনি জয়ী হওয়ার হাতিয়ার বানানোর উপদেশ দিয়েছেন।
৩২ বার ব্যর্থ হওয়ার পর শেষবারের মতো তাঁর বই ছাপতে দেন ব্লুমস বারি নামের একটি প্রকাশনাকে। সেই প্রকাশনার প্রধানের ৮ বছরের মেয়ে হ্যারি পটার বইটার প্রথম অংশ ছাপা হওয়ার আগেই পড়ে ফেলল এবং বইটা খুব পছন্দ করে। মেয়ের ভালো লেগেছে দেখে প্রকাশক বই ছেপেছিলেন।
জে কে রাওলিং জানতেন এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, তিনি ঠিকই সফলতা অর্জন করতে পারবেন। তাঁর লেখা মানুষ মূল্যায়ন করবেই। তিনি সবাইকে উপদেশ দিয়েছেন, জয়ী হওয়ার জন্য পরিশ্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
১৯৯৩ সালে চাকরিহীন হয়ে, প্রথম স্বামীর কাছ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে অর্থনৈতিক ও মানসিক কষ্টকে দূরে সরানোর জন্য তিনি প্রবল সংগ্রাম করেছেন। কখনোই মনোবল হারাননি।
বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি আশায় বুক বেঁধে পরিশ্রম করেছেন। তিনি সব সময়ই বলেন, ‘ব্যর্থতা হলো জয়ের হাতিয়ার।’
পৃথিবীর বেস্ট সেলার বইয়ের গৌরব অর্জন করে হ্যারি পটার এবং ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ সিনেমা। তিনিই প্রথম নারী, যিনি লিখে বিলিওনারী হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি তোমার কোনো স্বপ্ন বা ইচ্ছে থাকে আর সেই জায়গায় তুমি যদি বারবার ব্যর্থ হও, তবে তোমার স্বপ্নটাকে মেরে ফেলো না।’
তুমি এত বেশি পরিশ্রম করে দেখাও যে, তুমি যেন সফল হতে পারো। তোমার জীবন যদি খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়, তবু তুমি আশা ছেড়ে দিয়ো না। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিশ্রম করতেই থাকো।
আমাদের চাই অটুট আস্থা ও পরিশ্রম করার অদম্য সাহস। চাই নিজের ওপর প্রবল বিশ্বাস।
আপনি কতটুকু বোঝা বইতে পারবেন, কতটা কষ্ট করতে পারবেন, সেই চিন্তাশক্তি আপনাকে করতে হবে। চারপাশের, পরিবারের মানুষজন আপনার সুখ-দুঃখের অংশীদার কিন্তু নিজের দায়িত্ব একান্ত আপনাকেই পালন করতে হবে। আপনি যা পেতে চান, তা অর্জন করতে হলে আপনাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর সাহসী হতে হবে। কথাগুলো জে কে রাওলিংয়ের।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে তিনি একই কথা বারবার বলেন, তাঁর মতে ব্যর্থতা হলো সাফল্যের সিঁড়ি।
লেখক চিকিৎসক
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য।